Monday, July 14, 2008

কিছু টুকরো স্মৃতি

গাড়ি ড্রাইভ ওয়েতে পার্ক করতে করতে খেয়াল করলাম বাসার গেট টি খোলা, তারমানে কেউ এসেছে। কে এসেছে ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে ঢুকি। শুনতে পেলাম রান্না ঘর থেকে কিছু কন্ঠস্বর ভেসে আসছে, তবুও বুঝতে পারলাম না কে এসেছে। নিজের রুমে এসে ঢুকবো তখন দেখি দরজায় একটা খাম স্টিকিটেপ দিয়ে আটকানো। ওপরে বড় বড় করে মুমু লেখা। দেখে একটু অবাক হই, আমার রুমের দরজায় এভাবে কে চিঠি রাখল। খাম টা দরজা থেকে খুলে নিয়ে ঘরে ঢুকি। ব্যাগটা নিচে রেখে চিঠিটা খুলতে থাকি। ভাবতে থাকি এভাবে নাম না লিখে স্টিকি টেপ দিয়ে দরজায় চিঠি কে রাখতে পারে। কিন্তু চিঠি খুলে তো আমি অবাক। এতো দেখি এলোমেলো ভাবে লেখা এক Ransom চিঠি।

ইংলিশে লেখা চিঠির ভাষা হলঃ "তুমি যদি তোমার প্রিয় ডলফিনটাকে আবার দেখতে চাও তাইলে ২০ ডলার এই খামে ভরে আমার রুমে নিয়ে আসো, আর আম্মুকে বললে তোমার ডলফিনের ওপর গ্যাসের গুলি করা হবে"। পড়ার সাথে সাথে আমি রেগে ছুটে যাই আমার ছোট ভাইয়ের ঘরে। গিয়ে দেখি আমার ছোট খালাত ভাই আর আমার ছোট ভাই দুজন আমাকে দেখেই হেসে কুটিকুটি। ওদের হাসি দেখে আমার রাগ আরও বেড়ে যায়। আমি ধমকের সাথে বলি "আমার ডলফিন কোথায়?" কিন্তু কার কথা কে শোনে, ওদের হাসি থামেইনা, কোন রকমে একজন শুধু বলতে পারল "জানিনা"। বকা বকি করেও যখন কিছু বলেনা তখন আমি গেলাম আম্মুর কাছে নালিশ নিয়ে। আম্মুকে জোর করে নিয়ে আসলাম আমার জিনিস ফিরত দিতে বলার জন্য। কিন্তু আম্মু আসতেই দেখি ওরা খুব ভদ্র ভাবে পিসিতে কি যেন দেখছে, যেন ডলফিন তো দুরের কথা, ভাব দেখে মনে হয় পৃথিবীর কোনো দুষ্ট বুদ্ধি এদের ধারের কাছেও কখনো আসেনি। নিষ্পাপ দুই টিনএজার। পরে রুমে এসে দেখি বিছানার ওপর ডলফিনটা।

এ ঘটনা প্রায় ৩-৪ বছর আগের হোলেও আমার ছোট ভাই আর দুই খালাতো ভাইয়ের দুষ্টমি এখনো কমেনি। অনেক ছোট থেকেই যেমন আমার সাথে দুষ্টমি করত তেমন আমার ভক্তও অনেক। অবশ্য ওদের একা দোষ দেয়া ঠিক হবেনা, কারন আমিও ফাজিল কম না। আমাদের বাসায় খালারা রাতে থাকলে বা ওদের বাসায় রাতে থাকলে, আমি সকালে আমার এই ভাইদের আগে ঘুম থেকে উঠে ওদের ঘুম ভাঙ্গাই। না গান গেয়ে না। ঘুমন্ত মুখে পানি ফেলে ঘুম ভাঙ্গানোর যে কি মজা তা না দেখলে বোঝার মত না। ওরা ঘুমন্ত চোখে হাত-পা ছোরার আগেই আমি দৌড়।

সব ভাইবোনরাই মারামারি করে। আমরা মারামারি করলে যেহেতু আমি শক্তিতে ওদের সাথে পারব না তাই আমার নিজেকে বাঁচানোর এক পদ্ধতি হল স্পিটিং। এই স্পিটের টেকনিক অনেকটা ভেঙচি কাটার মত, জিব্বা অল্প একটু বের করে, ফ্লাট করে থুতু দিলে তা ছোটছোট কনা হয়ে ছড়ায়ে পরে। আমাকে ওরা এট্যাক করতে আসলেই আমি বলি "স্পিট করলাম কিন্তু" এই বলেই স্পিট করা শুরু করি, আর থুতুর ছোট ছোট কনা ছড়ায়ে ছিটায়ে পরে। ওরা ইউউ ইউউ করতে করতে সরে যায়, থুতুর কনা গায়ে লাগার ভয়ে কাছে আসেনা আর আমি বিজয়ির হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকি।
সুযোগ পেলেই কারনে অকারনে আমি ওদের খোঁচাতে ভালবাসি, কারন আমি জানি ওরা নালিশ করলেও কোনো পাত্তা পাবেনা। আর আমাকে কিছু না করলেও আমি যদি শুধু বলে উঠি "আম্মু দেখোতো" তাহলেই আম্মু অন্য রুম থেকে ওদের বকা দেয়। তবে আদরের কথা বললে বলব আমি আম্মুকে খুব কমই মুখে বা কথায় আদর করতে দেখেছি। অনেক মা'দের মত আদর করে আম্মু মুখে "মা, মামনি" ডাকা বা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া এমন করেনা। তবে আম্মুর আদর অনুভব করি প্রতিদিন, প্রতিক্ষন, যা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রতিবার জন্মদিনে আম্মু কার্ডে সুন্দর সুন্দর কথা লিখে দেয় যা মুখে কখনো বলেনা। বেশ কিছু বছর আগে আমার এক জন্মদিনের কার্ডে আম্মু কিছু কথার সাথে বলেছিল "তোমার জন্মদিনটা আমাদের কাছে যেমন স্বপ্নীল আর আনন্দের ছিল, তেমনি সুখ, আনন্দ ও সমৃদ্ধে পরিপুর্ন হোক তোমার জীবন"। সেই সময়টা আমার খুব কষ্টের একটা সময় ছিল, জীবনের কোনো মানে খুঁজে পেতাম না তখন। শুধু মনে হত খুব অন্ধকার একটা ঘরে আমি একা আটকে আছি যেখান থেকে বের হওয়ার কোনো দরজা নেই। সেই সময়ে আম্মুর এই কথাগুলো পড়ে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল, ভেবেছিলাম ইসস ভাগ্যিস আম্মু জানেনা আমি মনে মনে কি কষ্টে আছি।

সবার ছেলেবেলার নানা রং বেরঙের মজার মজার স্মৃতি আমার শুনতে খুব ভাল লাগে। এখানে সচলের অনেকের ছেলেবেলার স্মৃতি নিয়ে লেখা পড়ে আমারও কিছু লিখতে ইচ্ছে করল, তাই এ লেখা। শেষে একটি কান্ড দিয়ে লেখা শেষ করছি।

চালাকি

ইংল্যান্ডে আব্বু পড়াশোনার জন্য এসেছে, সাথে সঙ্গি হয়ে আমি আর আম্মুও এসেছি। আমার বয়স হবে ৫-৬ এর মত। যে বয়সে সাধারনত বাচ্চারা কেউ দোকানে যাচ্ছে শুনলেই সাথে যাওয়ার জন্য লাফালাফি করে, আমিও তেমনই করতাম। তো ঘটনার দিন আব্বুও বাধ্য হয়ে আমাকে সাথে নিয়ে গেল।
লক্ষি মেয়ের মত আমি আব্বুর হাত ধরে সপিং এ এলাম। আব্বু কিছু ফলমুল কিনবে বলে এক জাগায় দাঁড়াল, দাঁড়িয়ে উঁচু এক টেবিলে কি কি যেন দেখছে কেনার জন্য। বলে রাখছি লম্বায় আমি তখন আব্বুর হাটুর সমান হব, তাই ঐ টেবিল আমার চেয়েও উচু। তাই আমি বোরড হয়ে কি করব ভেবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। তখন একটা খেলনার দোকানে চোখ পড়ল। ভাবলাম অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আব্বু যদি আমাকে রেখে চলে যায়। তখন ভেবে একটা বুদ্ধি বের করলাম। ভাবলাম আব্বুর প্যান্টের পিছনের পকেটে যদি হাত ঢুকিয়ে রাখি তাহলে আব্বু নড়লে বা চলে যাওয়া শুরু করলেই আমি বুঝতে পারব।

যা ভাবা তাই কাজ, আমি আব্বুর পিছনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অন্য দিকে সবকিছু দেখতে থাকলাম মনের আনন্দে। বেশ কিছুক্ষন পর আমার হাতে টান পরল, মানে আব্বু চলে যাচ্ছে। আমিও যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়াই.... কিন্তু একি!, ওপরে তাকায়ে দেখি এ অন্য আরেক বিদেশি লোক, তারমানে আমি এতক্ষন অন্য এক লোকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে আব্বুকে না দেখে ভয়ে কান্না শুরু করলাম। ঐ বিদেশি লোক আমাকে থামানোর জন্য নানান কথা জিজ্ঞেস করছে, বোঝানোর চেষ্টা করছে , কিন্তু আমি এদিকে কেঁদেই যাচ্ছি,এমন সময় দেখি আব্বু দৌড়ে আসছে .....

দেয়ালের সাথে বিয়ে !!

সেদিন খবরের কাগজে খবরটি দেখে আমি হতবাক, ভাবলাম হয়ত পাঠকদের চোখে পরার জন্যই হয়ত এমন শিরোনাম, কিন্তু না। লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম ঘটনা একশত ভাগ সত্যি। আজকালকার যুগে সভ্য মানুষেরাও যে এমন করতে পারে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

যাইহোক ঘটনার গভীরে যাওয়ার আগে আপনাকে জিজ্ঞেস করি আপনার মতে প্রেম-ভালবাসা মানে কি? আমরা সবাইতো জীবনে কাউকে না কাউকে ভালবেসেছি, বাসছি এবং বাসব। ক্ষণিকের জন্য হলেও এ ভালবাসা আমাদের সবার জীবনেই কখনো না কখনো এসেছে। হোকনা সে চুপিচুপি, মনেমনে বা সবাইকে জানিয়ে।

এই লেখাটি পড়ার পর আমি ভেবে দেখলাম যে মানুষ মাত্রই ভালবাসে। কিন্তু এ ভালবাসার রূপ নির্ভর করে পাত্রের ওপর। যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন এর প্রতি ভালবাসা এক রূপ। আবার আমাদের পোষা কুকুর, বিড়াল, পাখি, মাছ, ব্যাঙ, সাপ এমনকি ফুলের গাছ, আম গাছ এরকম আরও কতকিছুর প্রতি আমাদের ভালবাসা আরেক রূপ যা এক ধরনের মমতাবোধ থেকে আসে। তাই যে কোনো জীবকেই আমরা ভালবাসতে পারি।
তবে জড় পদার্থকে কি আমরা ভালবাসতে পারি? কেন নয়, অবশ্যই পারি। ভেবে দেখলাম আমিওতো আমার ব্যাগ, জুতা, ফোন, আইপড, পিএসপি ইত্যাদিকেও ভালবাসি। তবে আবারো সেটা শুধুই মমতাবোধ আর মানুষের মমতাবোধতো যে কোনো কিছুর জন্যই হতে পারে।


কিন্তু লেখাটিতে যে ভালবাসার কথা বলেছে তা শুধু মায়া, মমতাবোধে সীমাবদ্ধ নয়। শিমুল আপুর "কত্ত রঙ্গের ভালোলাগায়" আবার পরিবর্তনশীল ভাইয়ের "মেয়ে টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি" সিরিজ গুলোতে দেখেছি নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ, আবার পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণ। যদি বলি এমন আকর্ষণ বা ভালবাসা কেবল মাত্র নরের নারীর প্রতি বা নারীর নরের প্রতিতে সীমাবদ্ধ নেই, সেটা জড় পদার্থের ওপরও কখনো কখনো হতে পারে? আশ্চর্য হচ্ছেন? হুমমমম আমিও হয়েছি।

ভালবাসার এ অস্বাভাবিক রূপ হল এক ধরনের অসুখ। এই অসুখের নাম হল অবজেকটাম সেক্সুয়ালিটি। এই অসুখের কিছু আশ্চর্যজনক, আজগুবি কাণ্ডের বা পাগলামীর নমুনা দিচ্ছি নিচে।

প্রথম মনোরোগি
এক সুইডিস মহিলা এখন যার বয়স এখন ৫৪, দীর্ঘ ২৯ বছর সংসার করেছেন "বার্লিন ওয়াল" এর সাথে। বিয়ের পর নিজের নাম পালটে নামও রেখেছেনে এলিজা রিট্টা বারলিনার মাউএর (বারলিনার মাউএর মানে জার্মান ভাষায় বারলিনের ওয়াল)। উনি বলেছেন ওয়ালকে ছেলেবেলায় টিভিতে দেখেই উনি এর প্রেমে পড়ে যান আর ওয়ালের ছবি যোগাড় করা শুরু করেন। ওয়ালটিকে দেখতে যাওয়ার জন্য টাকাও জমা করা শুরু করেন তখন থেকেই। এরপর পাঁচ বার ডেট করার পর ১৯৭৯ সালে তাদের ষষ্ঠ ডেট এ উনি আর ওয়াল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উনি বলেন "লম্বা, পাতলা আর হরিযোন্টাল লাইনের জিনিস ওনার কাছে খুব সেক্সি বলে মনেহয়"।
মানুষের দৃষ্টিতে কুমারী হলেও উনি তাদের এ দাম্পত্য জীবন ভালবাসায় পরিপূর্ণ বলে মনে করেন। আরো বলেন চীনের মহাপ্রাচীর বা দা গ্রেট ওয়াল ওফ চায়না নাকি ওনার কাছে এট্রাক্টিভ মনে হয় কিন্তু একটু বেশি মোটা।যাইহোক এই বার্লিন ওয়াল যখন ১৯৮৯ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয় তখন উনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তবুও স্বামীকে ভেঙ্গে ফেলার পর থুক্কু মেরে ফেলার পরও তিনি স্বামীর একটা মডেল বাসায় রেখে সংসার করেছেন। আহ্‌! কত প্রেম। তবে তা বেশিদিন টেকেনি কারণ এখন উনার নতুন প্রেম হছে বাসার বাগানের দেয়াল।

দ্বিতীয় মনোরোগি
এক আমেরিকান আর্মি অফিসার, ৩৬ বছর বয়স, বিয়ে করেছেন ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার। উনি গতবছর এই লোহার স্মৃতিস্তম্ভের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর নাম বদল করে রেখেছেন এরিকা লা আইফেল টাওয়ার। ওনার মতে পাবলিক জিনিসের প্রেমে পরার অসুবিধা হোল অন্তরংগ হবার অসুবিধা। উনি আরচারি বা ধনুবিদ্যায় ওয়ার্ল্ড চাম্পিয়ানও হয়েছিলেন।

তৃতীয় মনোরোগি
এমি ওলফ নামে আরেক আমেরিকান মহিলা, বয়স ৩২, নিউ ইয়র্কে থাকেন, যার প্রেমিক হোল নিউ ইয়র্কের খেলার মাঠের বাচ্চাদের এক খেলার রাইড। এতে আশ্চর্য হলে তার পূর্ব প্রেমিকের তালিকার কথা শুনুন, সেই তালিকায় আছে গান শোনার হাই-ফাই সিস্টেম যার নাম রেখেছেন জেক, চার্চের অরগান আর স্পেসশিপের মডেল সহ আর কিছু জড় পদার্থ।

অবজেকটাম সেক্সুয়্যালিটি নামে এ পাগলামির প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষের মাঝে আরেক ধরনের লক্ষণ দেখা যায় যার নাম "এস্পারগার সিম্পটম"। এই সিম্পটমের মানুষ জড় পদার্থকে ভালবাসলেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতিও আকৃষ্ঠ হয়, আর তাদের কাছে জড় পদার্থ ভালবাসার কারণ অনেকটা ব্যাকআপ ভালবাসা হিসেবে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন এই পাগলামির কারণ হতে পারে ছেলেবেলায় সেক্সুয়াল এবিউস, প্রত্যাখ্যাত অথবা এবান্ডনমেন্ট থেকে। এইসব কারনে ওরা আস্তে আস্তে জড় পদার্থের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে।

দুঃখজনক হোলেও এমন আজগুবি কান্ড পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম।
হায়!! এসব কি !!! সত্যজিত রায়ের গানটির কথা মনে পরছে, "কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ও ভাইরে কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়"।


আসল নিবন্ধ টা এখানে পাবেন এখানে
বি.দ্র. কেউ আমার লেখায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত

অভিমান

নিশ্চুপ চুপচাপ
নেই কোনও শব্দ
বাতাসের গতিহীন
সব নিস্তব্ধ।

শিশিরের আলতো
ছোঁয়া ঘাসে পড়েনি
মেঘের আদরে আজ
রবিদাও হাসেনি।

কিচির মিচির রব
পাখি কেউ জাগেনি
তাই হারিয়েছে লয়
ভৈরবী রাগিনী।

আকাশের কালো মুখ
মেঘে মেঘে দ্বন্দ্ব
বৃষ্টির তালে নেই
রিমঝিম ছন্দ।

আলতা রাঙায়ে রঙ
কলি আজ হাসেনি,
ফুলের আদর তাই
ভ্রমরা যে পায়নি।

শশী আর তারা সব
এক জোট বেঁধেছে
রাতের আলোর সাজে
বাধ তার সেধেছে।

জানো কেন এতকিছু
নিঝুম আজ হাসেনি
তাই অভিমানে সব
কেউ কথা বলেনি।

তবুও ঘড়ির কাঁটা
টিক টিক চলছে,
যন্ত্রমানব সব
তবুও যে ছুটছে.....

[উতসর্গ: নিঝুম - who is really ill, wishing you a fast recovery]

আমার সালসা শেখা...

সেই ৭ বছর বয়স থেকেই আমার জীবন মোটামুটি 'রোবোটিক'। ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা মা আমাকে পড়াশোনার জন্য স্কুলের কোচিং এর পাশাপাশি নাচ আর গানের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। আর আরবি ক্লাস তো আছেই, তাই সপ্তাহের প্রায় প্রতিটা দিনই আমার কোনও না কোনও কিছুর ক্লাস লেগেই থাকত। এমনকি বাইরে খেলতে যাওয়ার দিনগুলিও ছিল আমার বাঁধাধরা। এখন বাবা মা কোনো কিছু কনট্রোল না করলেও 'রোবোটিক' জীবনের খুব একটা পরিবর্তন আসেনি, বরং এর সাথে যোগ হয়েছে 'স্ট্রেস'।


আমি ছোট থেকেই খুবই ফাঁকিবাজ ধরনের তাই সবসময়ই কোনো না কোনো ক্লাস ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করতাম। আরবি পড়ার জন্য বাসায় হুজুর আসতেন তাই সেটায় ফাকি দেয়ার কোনও উপায় ছিলনা। স্কুলের কোচিংয়েও ফাকি দেয়া যেতনা। তবে গানের ক্লাস, সফল না হলেও ফাকি দেয়ার চেষ্টা করতাম। যদিও গান আমি এখন অসম্ভব ভালবাসি, তখন একদমই যেতে চাইতাম না। গানের ক্লাসে না যাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে এক এক কারণ বের করতাম। যতটা সম্ভব কাঁদো-কাঁদো মুখ করে আম্মুর কাছে গিয়ে বলতাম "আম্মু আজকে হঠাৎ একটু আগেই দেখি খুব গলা ব্যথা", নয়ত পেট ব্যথা নয়ত অন্য কিছু। হঠাৎ কখনো কখনো সফল হলেও প্রায় সব সময় আম্মু ফাঁকিবাজি ধরে ফেলত আর ধমক দিয়ে পাঠাত। যখন সফল হোতাম তখন নিজেকে ভাবতাম ইসস আমি কত চালাক , কিন্তু এখন বুঝতে পারি আম্মু আসলে তখন ঠিকই বুঝতে পারতেন আর মায়া করেই বলত "ঠিক আছে আজ যেতে হবেনা"।


এরপর হোল আরেক বিপদ, আম্মু বাসায় এক গানের ওস্তাদ ঠিক করল। আমার মাথায় বাজ পরার মত অবস্থা। এক ক্লাস ফাকি দিতেই হিমশিম খাই আর এখন বাসায় এসে উপস্থিত ওস্তাদ কিভাবে ফাঁকি দেই! কি আর করা বাধ্য হয়ে তখন প্রতি সপ্তাহে ডাবল ডোজের গানের তালিম নিতে থাকি, আর যেদিন ওস্তাদ বিকেলে আসতেন সেদিন বাইরে খেলতে যাওয়ার ২-৩ দিনের মাঝ থেকে আরও একদিন কমে যেত, বিরক্তির সীমা থাকতনা।


কিন্তু নাচের ক্লাসের জন্য ছিল আমার দারুন উৎসাহ। ক্লাস ফাকি দেয়াতো দুরের কথা আমি দিন গুনতাম কবে মংগলবার আসবে। এমনিতেই তিরিং বিরিং ভাব, নাঁচুনি বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি,বাসায় এসেও আমার নাচ থামত না। বাসায় কেউ বেড়াতে আসলেই তাকে দেখাতাম নতুন কি শিখলাম। যেখানে বকা না দিয়ে আমাকে হারমোনিয়াম নিয়ে বসানো যেত না সেখানে নাচের কথা আমাকে বলতেও হোতনা, সারাদিনই প্রাকটিস।


যদিও গানই এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছি, নাচ আমার অসম্ভব প্রিয়। সিডনি এসে ছোটবেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেচেছি যা সব ভিডিও ক্যাসেটে বন্দী হয়ে পরে আছে। এখানকার কিছু নৃত্যশিল্পী আন্টিরা শিখিয়ে দিত আর সেই রিহার্সালের মজার দিনগুলির কথা মনে পরলে অজান্তেই মুখে হাসি ফোটে। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অভাব নেই, কিছুদিন পর পর কিছুনা কিছু লেগেই থাকে। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের একাধিক অনুষ্ঠান ছাড়াও এসোসিয়েশন এর ফাংশন, বাংলা স্কুলের ফাংশন আরও কত কিছু। আম্মুর শখ ছিল তার মেয়েকে ফাংশনে নাচতে দেখা, আম্মুর সেই শখ মিটলেও আমার নাচ শেখার শখ মিটল না। খুব আফসোস হয়, দেশে থাকলে হয়ত নাচটা চালিয়ে যেতে পারতাম। হয়ত এতদিনে আমাকে টিভিতে সাইড নৃত্যশিল্পী হিসেবে টুকটাক দেখতেও পারতেন। দেশে যে হারে টিভির চ্যানেল বেরিয়েছে কয়েক ঝলকের জন্য হলেও হয়ত কোনো না কোনোটায় নিশ্চই একবার হলেও চান্স পেতাম।


গত বছর আমি আর আমার এক বান্ধবী ঠিক করলাম আমরা সালসা শিখব। যত বিজ্ঞাপন দেখলাম সব গুলোতে বলত নিজের ছেলে সঙ্গী নিয়ে আসতে হবে। যখন একটায় দেখলাম ছেলে সঙ্গী লাগবেনা তখন আমরাতো দারুণ খুশি, সাথে সাথে ভর্তি হয়ে গেলাম।


প্রথম দিন ক্লাসে গেলাম, নাচের ইন্সট্রাকটর দেখলাম বেশ ভাল। সবাইকে লাইনে দাড় করিয়ে এক এক করে স্টেপস শেখাতে লাগল। ক্লাসে খেয়াল করে দেখলাম আমাদেরই সবচেয়ে বয়স কম, বেশির ভাগই ৫০ উর্ধে মানে বাবা/মা/আঙ্কেল/আন্টি এমন কি দাদা/নানি টাইপের বয়সেরও ছিল। আমার বান্ধবী বলে যে সিটির বাইরের শহরে এই সময় এমন বয়সের লোকজন থাকাই স্বাভাবিক। আমরা ভাবলাম তাতে কি আমরাতো নাচই শিখতে এসেছি, ক্লাসে কে আছে না আছে তাতে কি আসে যায়, অবশ্য সুন্দর দেখতে কেউ থাকলে আপত্তি করতাম না ।


যাইহোক আমি আর আমার বান্ধবীতো মহা খুশিতে শিখতে লাগলাম, আমি না পারলে ও দেখিয়ে দিচ্ছে আর ও না পারলে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। এমন সময় নাচের ইনসট্রাকটর বলল সব ছেলেদের গোল হয়ে দাঁড়াতে, আর মেয়েদের বলল ঘুরে ঘুরে এক এক ছেলের সাথে নাচতে। শুনেতো আমি আর আমার বান্ধবী দুজন দুজনের দিকে তাকাচ্ছি। কম বয়সী সুন্দর কারো সাথে নাচতে হলে অন্য ব্যাপার কিন্তু এই বিশাল বয়স্ক ভুরিঅলাদের সাথে নাচতে হবে শুনেই আমার ... । তখন আমার ছোটবেলায় আম্মুকে গানের স্কুল ফাকি দেয়ার এক্সকিউস গুলো মনে পরল। আমি ইনসট্রাকটরকে খুব পেট ব্যথার কথা বলে চেয়ারে গিয়ে বসলাম। নাচের মাঝে মাঝে উনি আমার দিকে তাকাতেই একটু আধটু পেট ব্যথার ভান করার চেস্টা করলাম। বাসায় ফেরার পথে আমি আর আমার বান্ধবী হাসতে হাসতে গড়াগড়ি অবস্থা, এই তাহলে ছেলে সঙ্গী না লাগার কারন। আমি বললাম পুরো $১২০ ডলার পানিতে গেলেও আমার আপাতত সালসা সেখার সখ মিটেগেছে, এটলিস্ট নিজের পার্টনার না পাওয়া পর্যন্ত ...।

হয়ত... তোমাকে অনেক ভালবাসি

নয়ন হন্তদন্ত করে ফুলের দোকানে এসে ঢুকল, হাতে সময় কম, এদিক সেদিক দেখছে, তাজা লাল গোলাপ কিনতে হবে। আজ ওদের ৫ম বিবাহ বার্ষিক। বেছেবেছে নিশার জন্য লাল গোলাপের একটা বেশ বড় তোড়া কিনে নিল। দোকানের বাইরে বেরিয়ে এসে মনে হল না, শুধু ফুল নেয়াটা ঠিক হবেনা। ওর জন্য একটা শাড়ি নিয়ে গেলে কেমন হয়। না নিলেও নিশা কিছু বলবেনা কিন্তু নিলে মনেমনে খুব খুশি হবে। একটা রিক্সা ডেকে নয়ন উঠে পরল,

--- ধানমন্ডির নবরুপায় চলেন, কত নিবেন?

--- স্যার ১০ টাকা

--- আচ্ছা ঠিক আছে, একটু তাড়াতাড়ি করেন।


রিক্সায় যেতে যেতে নয়নের মনেহল আজ বিকেলটা এত সুন্দর নিশাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে ভাল হত। সন্ধায় বাইরে কোথায় যেন খাবে প্ল্যান করেছে নিশা। প্রতি বছর নিশাই সবকিছু প্ল্যান করে, নয়ন এসব একদমই পারেনা। প্রথম প্রথম নয়নের ওপর ভরসা করে বসে থাকত, পরে যখন বুঝতে পারল নয়নকে দিয়ে এসব হবেনা তখন নিজেই সব প্ল্যান করে নয়নকে জানাতো কোথায়, কখন, কিভাবে যেতে হবে, কি পড়তে হবে ইত্যাদি। নয়নও হাফ ছেরে বাচল।


নিশার সাথে নয়নের পরিচয় ওদের বন্ধু কাজলের মাধ্যমে। এক ফাংশনে নিশার গান শুনে নয়নতো হতবাক, এত সুন্দর করে হাসন রাজার এই গানটা গাইল কিভাবে মেয়েটা "নিশা লাগিলরে বাকা দুই নয়নে নিশা লাগিলো রে"। নিশার গান শুনে যে নয়ন ওর প্রেমে পরে গেল ব্যাপার কিন্তু একদম সেরকম না। কারণ, নয়ন তখন লন্ডন প্রবাসী লিপার প্রেমে হাবুডুবু। লিপা যদি তাকে ওভাবে ছ্যাকা না দিত তাহলে হয়ত আজ ওর পাশে নিশা থাকত না।


নয়ন আর নিশার সম্পর্ক শুরু হয় এই লিপার কাছে ছ্যাকা খাওয়ার কারনেই। লিপার অভাবটা নিশা পুরণ করেছিল বলেই হয়ত ও নিশার প্রতি ঝুঁকেছিল। সময়ে-অসময়ে, কারণে-অকারণে নিশাকে পাশে পেয়েছিল। নয়ন যখন বুঝতে পারল ও নিশাকে ভালবাসেনা তখন ওকে দূরে ঠেলে দিতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু নিশার দুচোখ ভরা ভালবাসার দিকে তাকিয়ে ও বলতে পারেনি। "আজ থাক কাল বলব" এমনি করে নয়ন আর কখনই বলতে পারেনি। নয়ন জানে নিশা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে নয়ন ওকে ভালবাসে। নিশাকে আসলে কখনই ভালবাসেনি নয়ন। নিশার প্রতি ওর অন্যরকম একটা অনুভুতি, অনেকটা কৃতজ্ঞতা বোধ এর।


নয়ন মনেমনে ঠিক করল আজ নিশার জন্য একটা নীল শাড়ি কিনবে। নীল রং নিশার খুব পছন্দ। নীল শাড়ি আর লাল গোলাপ ওর হাতে দিয়ে বলবে "হ্যাপি এ্যানিভারসারি সুইটি", তারপর (মন থেকে না হোক মুখ দিয়ে বলবে) নিশার কাংখিত ৩টা শব্দ "তোমাকে অনেক ভালবাসি"।

সিডনিতে প্রতীতির বর্ষবরণ ১৪১৫

সিডনিতে বরাবরই বেশ জাঁক-জমক ভাবেই নববর্ষ পালন করা হয়। প্রতি বছরের মত এবারও সিডনির এ্যাশফিল্ড পার্ক এর বটমূলে বাংলার নতুন বছর কে বরণ করে নিল প্রতীতি। প্রতীতি সিডনির একটি সংগীত গোষ্ঠি। বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সিরাজুস সালেকিন, যিনি পরিচালনা করছেন এবং নিজ হাতে গড়েছেন এই গানের গোষ্ঠি, যার অন্য পরিচয় প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও ভাষা দিবস গানের রচয়িতা ও সুরকার মরহুম আবদুল লতিফ এর ছেলে। প্রতীতির বর্ষবরণ উৎসব বাংলাদেশের বৈশাখী মেলার মতই হইচই আনন্দে ভরপুর হলেও একটু ভিন্নধর্মী।

যারা সিডনির বাইরে আছেন তাদের জন্য এ্যাশফিল্ড পার্ক এর বৈশিষ্টটা বলে রাখছি। রমনা বটমূলের মতই এখানেও বহুপুরানো অনেক গাছের সমাবেশ রয়েছে। ভাষা শহীদের স্মরণে এই পার্কে একটি শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যেখানে প্রতিবছর শহীদ দিবস পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানের দিন ভোর ৪টা-৫টা থেকে মাঠ আর মঞ্চের সাজসজ্যা, সাউন্ড ব্যালেনস সুরু করা হয় এবং ঠিক ৯.৩০ এ অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। অনুষ্ঠান শুরু হয় সরদ এবং ভৈরবী রাগ দিয়ে। হালকা শীতের সকালে, মাঠে গাছের নিচে প্রতীতির বর্ষবরণের গান প্রবাসী বাঙালীদের কিছুক্ষণের জন্য মনে করিয়ে দেয় রমনার বটমুল, বৈশাখের আমেজ, নববর্ষের আনন্দ।

প্রতীতির গান ও কবিতা পাঠের আসরের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের অন্য আকর্ষণ হল প্রতি বছর প্রতীতি একজন কে বেছেনেন ঐ বছরের "সেরা বাঙালি" হিসেবে যাকে অনুষ্ঠানের দিন পুরস্কৃত করা হয়। তাছারাও উপস্থিত দর্শকদের মাঝে বেছে নেয়া হয় "সেরা বাঙালী সাজ" এর একজন নারী ও পুরুষকে। ছোট ছোট শিশুদের জন্যও ছিল গল্প শোনার আসর।

আমার জানামতে সিডনির এই এ্যাশফিল্ড পার্কেই একমাত্র ছায়ানটের মত প্রতীতি এভাবে নববর্ষ পালন করে। পরবর্তী প্রজন্মদের বাংলা সংস্কৃতি বুঝতে এবং ধরে রাখতে সাহায্য করার জন্যই প্রবাসে প্রতীতির এমন আয়োজন। আমরা যারা দেশের বাইরে বড় হয়েছি, হচ্ছি, যারা কখনও দেশে বৈশাখী মেলা দেখিনি বা রমনার বটমূলে গান শুনতে যায়নি তারা প্রতীতির অনুষ্ঠানে সেই বৈশাখি আমেজ অনুভব করতে পারি।

এ মিড সামার নাইটস ড্রিম

Shakespeare এর "A Mid Summer Night's Dream", রুপকথার এই গল্পটা নিশ্চই আপনাদের পরিচিত। কিছুদিন আগে সিডনি থিয়েটারে দেখতে গেলাম। তেমন কোনও আশা নিয়ে যাইনি, শুধু বন্ধুরা যাচ্ছে তাই যাওয়া। কিন্তু গিয়ে মনে হয়েছিল ভাগ্যিস আমাকে জোর করা হয়েছিল আসার জন্য।

ইন্ডিয়ান আর শ্রীলংকান মিলিয়ে মোট ২২ জন মেমবার নিয়ে দলটির ২ বছর পরিস্রমের ফসল হল এই শোটি। ইন্ডিয়াতে বেশ নাম করার পর Royal Shakespeare Company তাদের আমন্ত্রন জানায়। UK সফর শেষে শোটি এখন Australiaসফর করল। আপনারা যারা এ দু দেশে আছেন হয়ত শুনে থাকবেন বা দেখেছেন।

শোটির যা বিশ্বেষত্ব বলে আমার মনে হল তা হচ্ছে শিল্পিদের ডায়ালগে বেশ কয়েকটি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। শিল্পিদের কয়েকজন বাংলায়, কয়েকজন হিন্দি, কয়েকজন মারাঠি, তামিল ইত্যাদি আরো কয়েকটি ভাষায় ডায়ালগ দিয়েছেন। ইংলিশ ভাষার ডায়ালগ ছিল বেশি। সত্যি বলতে আমার যা সবচেয়ে ভালো লেগেছিল তা হল এত বড় শোতে নিজের ভাষা শুনে। পরীদের দুটো গানের একটি গানও সম্পূর্ন করা হয়েছিল বাংলায় "আয় ঘুম"। খুব গর্ব করে অন্য দেশী বন্ধুদের বলেছিলাম এখন এটা আমার ভাষা

এক কথায় বলতে গেলে বলব আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে, যদিও আমি শুধু ইংলিশ আর বাংলা বুঝি (কিছু হিন্দি) তাই বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করায় সবকিছু বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছিল। আর পরীদের প্রেমের পাগলামীটা মনে হয় অতিরিক্ত ছিল, যারা দেখেছেন তারা বুঝবেন আমি কি বলতে চাচ্ছি। দুষ্টু পরীটা ছিলো সবচেয়ে মজার ক্যারেকটার, যে সবার মাঝে গোলমাল সৃষ্টি করত। বড় বড় লাল ঝুলন্ত পর্দার মাঝে বেধে তা দোলনার মত ব্যবহার করে পরীদের ফুলের মাঝে ঘুমানো যেভাবে দেখানো হয়েছিলো তা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। Music, Martial Arts, নাচ সব মিলিয়ে শোটি খুব ভালো ডাইরেকটেড ছিল।

আমার মনে হয় যদি এরকম ভালো ডিরেকশন দিয়ে এত ভালো পারফরমার নিয়ে কাজ করা যায় তাহলে Shakespeare কেন আমাদের উপমহাদেশের অনেক ঐতিহাসিক কাহিনি আছে যা আমরা অন্যান্য দেশের কাছে তুলে ধরতে পারি।

আদরের ছোট ভাই

আমার ভাইটা ছোট বেলায় খুব দুষ্ট ছিলো। দোকানে গেলে ওকে আম্মু খেলনা না কিনে দিয়ে আনতে পারতনা। আর আমার কথাতো একদমই শুনতনা। মনেহয় ওর শরীরে এমন কোনও হাড় নেই যা দুষ্টুমি আর খেলাধুলা করে ভাঙেনি। এমনকি একবার এক ফাংশন এ আমি আম্মু বসে আছি বক্ত্রতা শুনছি, একটু পর আমি গান গাইব, হঠাৎশুনি আমার আব্বু আমার ছোট ভাইকে হসপিটালে নিয়ে গেছে। ও পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে, সামনের দাঁত ও ভেঙে গেছে।

ছোট বেলায় রোজার সময় একদম রোজা করতে পারত না। কখন রোজা ভাঙবে তা একটু পর পর জিগেশ করত। আম্মু বলত "আমার ছেলেটার কি হবে, Australiaতে বড় হচ্ছে, এরকম হলেতো ধর্ম বলে কিছুই থাকবেনা"।

যখন থেকে চাকরি করছি তখন থেকেই ওকে এটা সেটা ফ্যশান এর জন্য কিনেদিতে হয়েছে। কখন যে হাই স্কুল শেষ করল টেরই পেলাম না। ওর ক্লাস 12 Formal এর জুতার জন্য শপিং এ গিয়ে অনেক ঘুরেছি ওর পছন্দ মত সাদা জুতা কেনার জন্য। তারপর শুূ সাদা না, কালোও কিনে দিতে হয়েছিল। Formal এ পরার জন্য আউটফিট তো আগেই কিনে দিয়েছিলাম। Formal এর দিন ওর মাথায় জেল দিয়ে চুলের স্টাইল ও করে দিতে হয়েছিল।

আমার সেই ছোট ভাই আজ এ কয়েক বছরএ অনেক বদলে গেছে। আমার ফোন রিসিভ কোরে ও আমাকে প্রথম সালাম দেয়। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি rubbish bin full, ওটা ফেলার জন্য ওকে যখন ডাকব তখন মনে পরল ওতো বাসায় নেই। আজকে ও Brisbane এ, Sydneyর কিছু বাঙালি মুসলিমদের সাথে ইসটেমাতে। খুব মিস করছি ওকে। গর্ব হয় যখন ভাবি চার বছর বয়স থেকে এই ওয়েস্টার্ন কালচার এ বড় হয়েও ধর্মের value টা বুঝতে পেরেছে।

রুপ

সবুজ পাতা লাল নীল

রোদের হাসি মেঘের মিল

বাতাস বহে শুনশান

পাখির কিচির মিচির গান।


লাল গোলাপী ফুলের রঙ,

প্রজাপতির নাচের ঢঙ

নদীর ঢেউ এর তালে তালে

নৌকা হেলে দুলে চলে।


আঁধার পালায় চাঁদের আলোয়

আকাশ ভরা তারায় তারায়

জোনাক পোকা পাতার ভিরে

ঝিকমিকিয়ে আলো ছরায়।


রিমঝিমিয়ে বৃষ্টি এলো

টাপুর টুপুর গাছের পাতায়

মিষ্টি মেয়ে নুপুর পায়ে

হেথায় সেথায় নেচে বেড়ায়।


সাগর পারে ঢেউ গুলো সব

আচরে পরে একে একে

সূর্য দেখে মুচকি হেসে

রঙের যাদু দিলো এঁকে।


আমার দেশের রুপের কথা

বলতে গেলে শেষ হবেনা

এমন রুপ এ দেশ ছারা

অন্য কোথাও আর পাবেনা।