Monday, July 14, 2008

দেয়ালের সাথে বিয়ে !!

সেদিন খবরের কাগজে খবরটি দেখে আমি হতবাক, ভাবলাম হয়ত পাঠকদের চোখে পরার জন্যই হয়ত এমন শিরোনাম, কিন্তু না। লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম ঘটনা একশত ভাগ সত্যি। আজকালকার যুগে সভ্য মানুষেরাও যে এমন করতে পারে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

যাইহোক ঘটনার গভীরে যাওয়ার আগে আপনাকে জিজ্ঞেস করি আপনার মতে প্রেম-ভালবাসা মানে কি? আমরা সবাইতো জীবনে কাউকে না কাউকে ভালবেসেছি, বাসছি এবং বাসব। ক্ষণিকের জন্য হলেও এ ভালবাসা আমাদের সবার জীবনেই কখনো না কখনো এসেছে। হোকনা সে চুপিচুপি, মনেমনে বা সবাইকে জানিয়ে।

এই লেখাটি পড়ার পর আমি ভেবে দেখলাম যে মানুষ মাত্রই ভালবাসে। কিন্তু এ ভালবাসার রূপ নির্ভর করে পাত্রের ওপর। যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন এর প্রতি ভালবাসা এক রূপ। আবার আমাদের পোষা কুকুর, বিড়াল, পাখি, মাছ, ব্যাঙ, সাপ এমনকি ফুলের গাছ, আম গাছ এরকম আরও কতকিছুর প্রতি আমাদের ভালবাসা আরেক রূপ যা এক ধরনের মমতাবোধ থেকে আসে। তাই যে কোনো জীবকেই আমরা ভালবাসতে পারি।
তবে জড় পদার্থকে কি আমরা ভালবাসতে পারি? কেন নয়, অবশ্যই পারি। ভেবে দেখলাম আমিওতো আমার ব্যাগ, জুতা, ফোন, আইপড, পিএসপি ইত্যাদিকেও ভালবাসি। তবে আবারো সেটা শুধুই মমতাবোধ আর মানুষের মমতাবোধতো যে কোনো কিছুর জন্যই হতে পারে।


কিন্তু লেখাটিতে যে ভালবাসার কথা বলেছে তা শুধু মায়া, মমতাবোধে সীমাবদ্ধ নয়। শিমুল আপুর "কত্ত রঙ্গের ভালোলাগায়" আবার পরিবর্তনশীল ভাইয়ের "মেয়ে টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি" সিরিজ গুলোতে দেখেছি নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ, আবার পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণ। যদি বলি এমন আকর্ষণ বা ভালবাসা কেবল মাত্র নরের নারীর প্রতি বা নারীর নরের প্রতিতে সীমাবদ্ধ নেই, সেটা জড় পদার্থের ওপরও কখনো কখনো হতে পারে? আশ্চর্য হচ্ছেন? হুমমমম আমিও হয়েছি।

ভালবাসার এ অস্বাভাবিক রূপ হল এক ধরনের অসুখ। এই অসুখের নাম হল অবজেকটাম সেক্সুয়ালিটি। এই অসুখের কিছু আশ্চর্যজনক, আজগুবি কাণ্ডের বা পাগলামীর নমুনা দিচ্ছি নিচে।

প্রথম মনোরোগি
এক সুইডিস মহিলা এখন যার বয়স এখন ৫৪, দীর্ঘ ২৯ বছর সংসার করেছেন "বার্লিন ওয়াল" এর সাথে। বিয়ের পর নিজের নাম পালটে নামও রেখেছেনে এলিজা রিট্টা বারলিনার মাউএর (বারলিনার মাউএর মানে জার্মান ভাষায় বারলিনের ওয়াল)। উনি বলেছেন ওয়ালকে ছেলেবেলায় টিভিতে দেখেই উনি এর প্রেমে পড়ে যান আর ওয়ালের ছবি যোগাড় করা শুরু করেন। ওয়ালটিকে দেখতে যাওয়ার জন্য টাকাও জমা করা শুরু করেন তখন থেকেই। এরপর পাঁচ বার ডেট করার পর ১৯৭৯ সালে তাদের ষষ্ঠ ডেট এ উনি আর ওয়াল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উনি বলেন "লম্বা, পাতলা আর হরিযোন্টাল লাইনের জিনিস ওনার কাছে খুব সেক্সি বলে মনেহয়"।
মানুষের দৃষ্টিতে কুমারী হলেও উনি তাদের এ দাম্পত্য জীবন ভালবাসায় পরিপূর্ণ বলে মনে করেন। আরো বলেন চীনের মহাপ্রাচীর বা দা গ্রেট ওয়াল ওফ চায়না নাকি ওনার কাছে এট্রাক্টিভ মনে হয় কিন্তু একটু বেশি মোটা।যাইহোক এই বার্লিন ওয়াল যখন ১৯৮৯ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয় তখন উনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তবুও স্বামীকে ভেঙ্গে ফেলার পর থুক্কু মেরে ফেলার পরও তিনি স্বামীর একটা মডেল বাসায় রেখে সংসার করেছেন। আহ্‌! কত প্রেম। তবে তা বেশিদিন টেকেনি কারণ এখন উনার নতুন প্রেম হছে বাসার বাগানের দেয়াল।

দ্বিতীয় মনোরোগি
এক আমেরিকান আর্মি অফিসার, ৩৬ বছর বয়স, বিয়ে করেছেন ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার। উনি গতবছর এই লোহার স্মৃতিস্তম্ভের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর নাম বদল করে রেখেছেন এরিকা লা আইফেল টাওয়ার। ওনার মতে পাবলিক জিনিসের প্রেমে পরার অসুবিধা হোল অন্তরংগ হবার অসুবিধা। উনি আরচারি বা ধনুবিদ্যায় ওয়ার্ল্ড চাম্পিয়ানও হয়েছিলেন।

তৃতীয় মনোরোগি
এমি ওলফ নামে আরেক আমেরিকান মহিলা, বয়স ৩২, নিউ ইয়র্কে থাকেন, যার প্রেমিক হোল নিউ ইয়র্কের খেলার মাঠের বাচ্চাদের এক খেলার রাইড। এতে আশ্চর্য হলে তার পূর্ব প্রেমিকের তালিকার কথা শুনুন, সেই তালিকায় আছে গান শোনার হাই-ফাই সিস্টেম যার নাম রেখেছেন জেক, চার্চের অরগান আর স্পেসশিপের মডেল সহ আর কিছু জড় পদার্থ।

অবজেকটাম সেক্সুয়্যালিটি নামে এ পাগলামির প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষের মাঝে আরেক ধরনের লক্ষণ দেখা যায় যার নাম "এস্পারগার সিম্পটম"। এই সিম্পটমের মানুষ জড় পদার্থকে ভালবাসলেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতিও আকৃষ্ঠ হয়, আর তাদের কাছে জড় পদার্থ ভালবাসার কারণ অনেকটা ব্যাকআপ ভালবাসা হিসেবে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন এই পাগলামির কারণ হতে পারে ছেলেবেলায় সেক্সুয়াল এবিউস, প্রত্যাখ্যাত অথবা এবান্ডনমেন্ট থেকে। এইসব কারনে ওরা আস্তে আস্তে জড় পদার্থের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে।

দুঃখজনক হোলেও এমন আজগুবি কান্ড পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম।
হায়!! এসব কি !!! সত্যজিত রায়ের গানটির কথা মনে পরছে, "কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ও ভাইরে কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়"।


আসল নিবন্ধ টা এখানে পাবেন এখানে
বি.দ্র. কেউ আমার লেখায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত

No comments: