Monday, July 14, 2008

কিছু টুকরো স্মৃতি

গাড়ি ড্রাইভ ওয়েতে পার্ক করতে করতে খেয়াল করলাম বাসার গেট টি খোলা, তারমানে কেউ এসেছে। কে এসেছে ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে ঢুকি। শুনতে পেলাম রান্না ঘর থেকে কিছু কন্ঠস্বর ভেসে আসছে, তবুও বুঝতে পারলাম না কে এসেছে। নিজের রুমে এসে ঢুকবো তখন দেখি দরজায় একটা খাম স্টিকিটেপ দিয়ে আটকানো। ওপরে বড় বড় করে মুমু লেখা। দেখে একটু অবাক হই, আমার রুমের দরজায় এভাবে কে চিঠি রাখল। খাম টা দরজা থেকে খুলে নিয়ে ঘরে ঢুকি। ব্যাগটা নিচে রেখে চিঠিটা খুলতে থাকি। ভাবতে থাকি এভাবে নাম না লিখে স্টিকি টেপ দিয়ে দরজায় চিঠি কে রাখতে পারে। কিন্তু চিঠি খুলে তো আমি অবাক। এতো দেখি এলোমেলো ভাবে লেখা এক Ransom চিঠি।

ইংলিশে লেখা চিঠির ভাষা হলঃ "তুমি যদি তোমার প্রিয় ডলফিনটাকে আবার দেখতে চাও তাইলে ২০ ডলার এই খামে ভরে আমার রুমে নিয়ে আসো, আর আম্মুকে বললে তোমার ডলফিনের ওপর গ্যাসের গুলি করা হবে"। পড়ার সাথে সাথে আমি রেগে ছুটে যাই আমার ছোট ভাইয়ের ঘরে। গিয়ে দেখি আমার ছোট খালাত ভাই আর আমার ছোট ভাই দুজন আমাকে দেখেই হেসে কুটিকুটি। ওদের হাসি দেখে আমার রাগ আরও বেড়ে যায়। আমি ধমকের সাথে বলি "আমার ডলফিন কোথায়?" কিন্তু কার কথা কে শোনে, ওদের হাসি থামেইনা, কোন রকমে একজন শুধু বলতে পারল "জানিনা"। বকা বকি করেও যখন কিছু বলেনা তখন আমি গেলাম আম্মুর কাছে নালিশ নিয়ে। আম্মুকে জোর করে নিয়ে আসলাম আমার জিনিস ফিরত দিতে বলার জন্য। কিন্তু আম্মু আসতেই দেখি ওরা খুব ভদ্র ভাবে পিসিতে কি যেন দেখছে, যেন ডলফিন তো দুরের কথা, ভাব দেখে মনে হয় পৃথিবীর কোনো দুষ্ট বুদ্ধি এদের ধারের কাছেও কখনো আসেনি। নিষ্পাপ দুই টিনএজার। পরে রুমে এসে দেখি বিছানার ওপর ডলফিনটা।

এ ঘটনা প্রায় ৩-৪ বছর আগের হোলেও আমার ছোট ভাই আর দুই খালাতো ভাইয়ের দুষ্টমি এখনো কমেনি। অনেক ছোট থেকেই যেমন আমার সাথে দুষ্টমি করত তেমন আমার ভক্তও অনেক। অবশ্য ওদের একা দোষ দেয়া ঠিক হবেনা, কারন আমিও ফাজিল কম না। আমাদের বাসায় খালারা রাতে থাকলে বা ওদের বাসায় রাতে থাকলে, আমি সকালে আমার এই ভাইদের আগে ঘুম থেকে উঠে ওদের ঘুম ভাঙ্গাই। না গান গেয়ে না। ঘুমন্ত মুখে পানি ফেলে ঘুম ভাঙ্গানোর যে কি মজা তা না দেখলে বোঝার মত না। ওরা ঘুমন্ত চোখে হাত-পা ছোরার আগেই আমি দৌড়।

সব ভাইবোনরাই মারামারি করে। আমরা মারামারি করলে যেহেতু আমি শক্তিতে ওদের সাথে পারব না তাই আমার নিজেকে বাঁচানোর এক পদ্ধতি হল স্পিটিং। এই স্পিটের টেকনিক অনেকটা ভেঙচি কাটার মত, জিব্বা অল্প একটু বের করে, ফ্লাট করে থুতু দিলে তা ছোটছোট কনা হয়ে ছড়ায়ে পরে। আমাকে ওরা এট্যাক করতে আসলেই আমি বলি "স্পিট করলাম কিন্তু" এই বলেই স্পিট করা শুরু করি, আর থুতুর ছোট ছোট কনা ছড়ায়ে ছিটায়ে পরে। ওরা ইউউ ইউউ করতে করতে সরে যায়, থুতুর কনা গায়ে লাগার ভয়ে কাছে আসেনা আর আমি বিজয়ির হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকি।
সুযোগ পেলেই কারনে অকারনে আমি ওদের খোঁচাতে ভালবাসি, কারন আমি জানি ওরা নালিশ করলেও কোনো পাত্তা পাবেনা। আর আমাকে কিছু না করলেও আমি যদি শুধু বলে উঠি "আম্মু দেখোতো" তাহলেই আম্মু অন্য রুম থেকে ওদের বকা দেয়। তবে আদরের কথা বললে বলব আমি আম্মুকে খুব কমই মুখে বা কথায় আদর করতে দেখেছি। অনেক মা'দের মত আদর করে আম্মু মুখে "মা, মামনি" ডাকা বা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া এমন করেনা। তবে আম্মুর আদর অনুভব করি প্রতিদিন, প্রতিক্ষন, যা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রতিবার জন্মদিনে আম্মু কার্ডে সুন্দর সুন্দর কথা লিখে দেয় যা মুখে কখনো বলেনা। বেশ কিছু বছর আগে আমার এক জন্মদিনের কার্ডে আম্মু কিছু কথার সাথে বলেছিল "তোমার জন্মদিনটা আমাদের কাছে যেমন স্বপ্নীল আর আনন্দের ছিল, তেমনি সুখ, আনন্দ ও সমৃদ্ধে পরিপুর্ন হোক তোমার জীবন"। সেই সময়টা আমার খুব কষ্টের একটা সময় ছিল, জীবনের কোনো মানে খুঁজে পেতাম না তখন। শুধু মনে হত খুব অন্ধকার একটা ঘরে আমি একা আটকে আছি যেখান থেকে বের হওয়ার কোনো দরজা নেই। সেই সময়ে আম্মুর এই কথাগুলো পড়ে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল, ভেবেছিলাম ইসস ভাগ্যিস আম্মু জানেনা আমি মনে মনে কি কষ্টে আছি।

সবার ছেলেবেলার নানা রং বেরঙের মজার মজার স্মৃতি আমার শুনতে খুব ভাল লাগে। এখানে সচলের অনেকের ছেলেবেলার স্মৃতি নিয়ে লেখা পড়ে আমারও কিছু লিখতে ইচ্ছে করল, তাই এ লেখা। শেষে একটি কান্ড দিয়ে লেখা শেষ করছি।

চালাকি

ইংল্যান্ডে আব্বু পড়াশোনার জন্য এসেছে, সাথে সঙ্গি হয়ে আমি আর আম্মুও এসেছি। আমার বয়স হবে ৫-৬ এর মত। যে বয়সে সাধারনত বাচ্চারা কেউ দোকানে যাচ্ছে শুনলেই সাথে যাওয়ার জন্য লাফালাফি করে, আমিও তেমনই করতাম। তো ঘটনার দিন আব্বুও বাধ্য হয়ে আমাকে সাথে নিয়ে গেল।
লক্ষি মেয়ের মত আমি আব্বুর হাত ধরে সপিং এ এলাম। আব্বু কিছু ফলমুল কিনবে বলে এক জাগায় দাঁড়াল, দাঁড়িয়ে উঁচু এক টেবিলে কি কি যেন দেখছে কেনার জন্য। বলে রাখছি লম্বায় আমি তখন আব্বুর হাটুর সমান হব, তাই ঐ টেবিল আমার চেয়েও উচু। তাই আমি বোরড হয়ে কি করব ভেবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। তখন একটা খেলনার দোকানে চোখ পড়ল। ভাবলাম অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আব্বু যদি আমাকে রেখে চলে যায়। তখন ভেবে একটা বুদ্ধি বের করলাম। ভাবলাম আব্বুর প্যান্টের পিছনের পকেটে যদি হাত ঢুকিয়ে রাখি তাহলে আব্বু নড়লে বা চলে যাওয়া শুরু করলেই আমি বুঝতে পারব।

যা ভাবা তাই কাজ, আমি আব্বুর পিছনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অন্য দিকে সবকিছু দেখতে থাকলাম মনের আনন্দে। বেশ কিছুক্ষন পর আমার হাতে টান পরল, মানে আব্বু চলে যাচ্ছে। আমিও যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়াই.... কিন্তু একি!, ওপরে তাকায়ে দেখি এ অন্য আরেক বিদেশি লোক, তারমানে আমি এতক্ষন অন্য এক লোকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে আব্বুকে না দেখে ভয়ে কান্না শুরু করলাম। ঐ বিদেশি লোক আমাকে থামানোর জন্য নানান কথা জিজ্ঞেস করছে, বোঝানোর চেষ্টা করছে , কিন্তু আমি এদিকে কেঁদেই যাচ্ছি,এমন সময় দেখি আব্বু দৌড়ে আসছে .....

No comments: